Dhaka 4:21 am, Thursday, 31 July 2025
স্থানীয়দের আতঙ্ক, তদন্তে নানা প্রশ্নের জন্ম

কেরানীগঞ্জে দুর্ধর্ষ ডাকাতি: প্রবাসীর বাড়ি টার্গেট, প্রশ্নে নিরাপত্তা ব্যবস্থা

কেরানীগঞ্জের কাঠালতলীতে বুধবার ভোর রাতে সংঘটিত একটি ডাকাতির ঘটনায় স্থানীয় জনমনে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। প্রবাসী আব্দুল আজিজের ডুপ্লেক্স বাড়িতে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ সাত লাখ টাকা ও আট ভরি স্বর্ণালংকার লুটের এ ঘটনায় নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে এলাকাটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ডাকাতচক্রের গতিবিধি নিয়ে।

বাড়ির মালিক জানান, রাত তিনটার দিকে ৭-৮ জনের একদল ডাকাত ছাদ বেয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। ঘরের দরজা খোলা পেয়ে তারা দ্রুত সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হাত-পা বেঁধে ফেলে। এরপর আলমারির চাবি আদায় করে বাড়ি তছনছ করে ফেলে। ডাকাতরা চলে যাওয়ার পর স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়।

 

পুলিশ ও সিআইডি সূত্র বলছে, ঘটনাস্থল থেকে কিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে যাচাই-বাছাই চলছে। তবে এখনো কোনো সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য মেলেনি।

কেরানীগঞ্জ মডেল থানার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “ডাকাতরা পেশাদার চক্র বলে মনে হচ্ছে। তারা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এই বাড়িকে টার্গেট করেছিল।”

 

বাড়ির মালিক আব্দুল আজিজ দীর্ঘদিন সৌদি আরবে ছিলেন এবং সম্প্রতি দেশে ফিরে নতুনভাবে ঘর সাজিয়েছেন। এলাকায় এই তথ্য জানা থাকায় অনেকের ধারণা, প্রবাসীর বাড়িতে বড় অঙ্কের অর্থ ও স্বর্ণালংকার মজুদ আছে, সেটি ডাকাতদের কাছে পৌঁছে গেছে।

 

ঘটনার পরদিন থেকেই এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কিত। অনেকেই রাত জেগে প্রহরায় সময় কাটাচ্ছেন। কাঠালতলী এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, “এত বড় ঘটনা ঘটেও কোনো অপরাধী ধরা না পড়া আমাদের নিরাপত্তাহীন করে তুলেছে।”

অনেকেই অভিযোগ করেছেন, এলাকায় রাতে টহল বা পুলিশি উপস্থিতি খুবই সীমিত। বারবার অভিযোগ সত্ত্বেও আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা, যেমন—সিসিটিভি মনিটরিং বা রাত্রিকালীন নিরাপত্তা জোরদার করা হয়নি।

 

কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “আমরা তদন্ত শুরু করেছি। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অপরাধীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। এই চক্রের পেছনে কারা আছে, তা দ্রুত বেরিয়ে আসবে।”

কেরানীগঞ্জের মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় সংঘবদ্ধ ডাকাতির এ ঘটনা শুধু একটি পরিবারের ক্ষতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি স্থানীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার একটি বড় ধরনের ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। অপরাধীরা যদি দ্রুত ধরা না পড়ে, তবে এটি অনুকরণীয় হয়ে উঠতে পারে আরও চক্রের জন্য। এখন দেখার বিষয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কতটা দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে এই ভয়াবহ ডাকাতির রহস্য উন্মোচন করতে পারে।

 

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বৈষ্ণব সেবা সংঘের মিলনমেলা: ধর্মীয় সম্প্রীতির অনন্য বার্তা

স্থানীয়দের আতঙ্ক, তদন্তে নানা প্রশ্নের জন্ম

কেরানীগঞ্জে দুর্ধর্ষ ডাকাতি: প্রবাসীর বাড়ি টার্গেট, প্রশ্নে নিরাপত্তা ব্যবস্থা

Update Time : 11:18:30 am, Wednesday, 2 July 2025

কেরানীগঞ্জের কাঠালতলীতে বুধবার ভোর রাতে সংঘটিত একটি ডাকাতির ঘটনায় স্থানীয় জনমনে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। প্রবাসী আব্দুল আজিজের ডুপ্লেক্স বাড়িতে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ সাত লাখ টাকা ও আট ভরি স্বর্ণালংকার লুটের এ ঘটনায় নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে এলাকাটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ডাকাতচক্রের গতিবিধি নিয়ে।

বাড়ির মালিক জানান, রাত তিনটার দিকে ৭-৮ জনের একদল ডাকাত ছাদ বেয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। ঘরের দরজা খোলা পেয়ে তারা দ্রুত সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হাত-পা বেঁধে ফেলে। এরপর আলমারির চাবি আদায় করে বাড়ি তছনছ করে ফেলে। ডাকাতরা চলে যাওয়ার পর স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়।

 

পুলিশ ও সিআইডি সূত্র বলছে, ঘটনাস্থল থেকে কিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে যাচাই-বাছাই চলছে। তবে এখনো কোনো সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য মেলেনি।

কেরানীগঞ্জ মডেল থানার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “ডাকাতরা পেশাদার চক্র বলে মনে হচ্ছে। তারা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এই বাড়িকে টার্গেট করেছিল।”

 

বাড়ির মালিক আব্দুল আজিজ দীর্ঘদিন সৌদি আরবে ছিলেন এবং সম্প্রতি দেশে ফিরে নতুনভাবে ঘর সাজিয়েছেন। এলাকায় এই তথ্য জানা থাকায় অনেকের ধারণা, প্রবাসীর বাড়িতে বড় অঙ্কের অর্থ ও স্বর্ণালংকার মজুদ আছে, সেটি ডাকাতদের কাছে পৌঁছে গেছে।

 

ঘটনার পরদিন থেকেই এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কিত। অনেকেই রাত জেগে প্রহরায় সময় কাটাচ্ছেন। কাঠালতলী এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, “এত বড় ঘটনা ঘটেও কোনো অপরাধী ধরা না পড়া আমাদের নিরাপত্তাহীন করে তুলেছে।”

অনেকেই অভিযোগ করেছেন, এলাকায় রাতে টহল বা পুলিশি উপস্থিতি খুবই সীমিত। বারবার অভিযোগ সত্ত্বেও আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা, যেমন—সিসিটিভি মনিটরিং বা রাত্রিকালীন নিরাপত্তা জোরদার করা হয়নি।

 

কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “আমরা তদন্ত শুরু করেছি। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অপরাধীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। এই চক্রের পেছনে কারা আছে, তা দ্রুত বেরিয়ে আসবে।”

কেরানীগঞ্জের মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় সংঘবদ্ধ ডাকাতির এ ঘটনা শুধু একটি পরিবারের ক্ষতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি স্থানীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার একটি বড় ধরনের ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। অপরাধীরা যদি দ্রুত ধরা না পড়ে, তবে এটি অনুকরণীয় হয়ে উঠতে পারে আরও চক্রের জন্য। এখন দেখার বিষয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কতটা দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে এই ভয়াবহ ডাকাতির রহস্য উন্মোচন করতে পারে।