Dhaka 11:54 pm, Thursday, 31 July 2025

১৩৩ কোটির পেছনের গল্প: কারা চালায় সীমান্ত-সিন্ডিকেট 

দেশের সীমান্তে যেন অব্যাহত এক অঘোষিত যুদ্ধ চলছে—চোরাচালান চক্রের বিরুদ্ধে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) যুদ্ধে নেমেছে। মে মাসেই তাদের অভিযানে জব্দ হয়েছে প্রায় ১৩৩ কোটি ১১ লক্ষ টাকার বেশি চোরাচালান পণ্য। শুধু পরিমাণেই নয়, চোরাচালানের পরিধি ও বৈচিত্র্য এখন উদ্বেগজনক রূপ নিয়েছে—স্বর্ণ, গরু, কসমেটিক্স, ইলেকট্রনিক্স, এমনকি হ্যান্ড গ্রেনেড পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে সীমান্ত থেকে।

মে মাসে বিজিবির হাতে ধরা পড়া পণ্যের তালিকা বিশাল এবং বিস্ময়কর। এতে ছিল—১ কেজি ৫১২ গ্রাম স্বর্ণ, ২৪ লক্ষাধিক আতশবাজি, ১১৩১টি গরু-মহিষ, ৫৪ হাজার বোতল কাশির সিরাপ (ইস্কাফ), ১টি হ্যান্ড গ্রেনেড, ৫টি বিদেশি পিস্তল, ৬ লক্ষাধিক ইয়াবা, ১৩টি ট্রাক ও ৭২টি মোটরসাইকেল, এমনকি কষ্টি পাথরের মূর্তি।

চোরাচালানকারীরা শুধু সীমান্ত দিয়ে নয়, বরং সড়ক, নদীপথ ও ছোট যানবাহন ব্যবহার করেও এই পণ্য পাচারের চেষ্টায় লিপ্ত ছিল। জব্দ হওয়া ৯২টি নৌকা এবং ২৬টি সিএনজি/ইজিবাইক-এর উপস্থিতি এ কথারই প্রমাণ দেয়।

এই চোরাচালান তৎপরতার একটি বিপজ্জনক দিক হচ্ছে মাদকের বিস্তার। গত এক মাসে: ৬,২০,৯৬৬ পিস ইয়াবা, ১০ কেজির বেশি হেরোইন,

২৩ গ্রাম আইস (ক্রিস্টাল মেথ), ১ কেজি কোকেন, ১০ হাজার ফেনসিডিল, ৮ হাজারের বেশি বিদেশি মদ, ১,৯০০ কেজির বেশি গাঁজা, ৫ বোতল এলএসডি।

 

এসব মাদক শুধু সীমান্তে আটকে থাকেনি—তাদের গন্তব্য ছিল দেশের অভ্যন্তর, শহরের অলি-গলিতে। বিজিবির জব্দ করা এসব উপাদান দেশব্যাপী মাদক চোরাচালান নেটওয়ার্কের বিস্তারের ইঙ্গিত দেয়।

এ মাসেই বিজিবি ৭২৫ জন অবৈধ অনুপ্রবেশকারী—বাংলাদেশি ও ভারতীয় নাগরিককে আটক করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক, ৩৯০ জন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীকেও ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি সীমান্ত নিরাপত্তার পাশাপাশি আঞ্চলিক সংকটকেও নতুন করে সামনে নিয়ে আসে।

 

চোরাচালান রোধে রাষ্ট্রের চ্যালেঞ্জ

 

চোরাচালান বা সীমান্ত অপরাধ নতুন কিছু নয়, তবে এর প্রযুক্তিগত, আর্থিক এবং সংগঠিত পরিসর দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিজিবি’র প্রতিবেদন বলছে, মে মাসে ১৪৫ জন চোরাচালানকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়—তাদের পেছনে থাকা মূল পরিকল্পনাকারীরা কে? কাদের মদদে এই বহুমাত্রিক চোরাচালান নেটওয়ার্ক সক্রিয়?

 

বিজিবি’র ভূমিকা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। কিন্তু এই সাফল্যকে টেকসই করতে হলে প্রয়োজন শুল্ক গোয়েন্দা, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ, নৌপুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বিত তৎপরতা। একই সঙ্গে, সীমান্ত এলাকায় জনসচেতনতা, বিকল্প কর্মসংস্থান এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছাও অপরিহার্য।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বৈষ্ণব সেবা সংঘের মিলনমেলা: ধর্মীয় সম্প্রীতির অনন্য বার্তা

১৩৩ কোটির পেছনের গল্প: কারা চালায় সীমান্ত-সিন্ডিকেট 

Update Time : 02:01:45 pm, Monday, 16 June 2025

দেশের সীমান্তে যেন অব্যাহত এক অঘোষিত যুদ্ধ চলছে—চোরাচালান চক্রের বিরুদ্ধে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) যুদ্ধে নেমেছে। মে মাসেই তাদের অভিযানে জব্দ হয়েছে প্রায় ১৩৩ কোটি ১১ লক্ষ টাকার বেশি চোরাচালান পণ্য। শুধু পরিমাণেই নয়, চোরাচালানের পরিধি ও বৈচিত্র্য এখন উদ্বেগজনক রূপ নিয়েছে—স্বর্ণ, গরু, কসমেটিক্স, ইলেকট্রনিক্স, এমনকি হ্যান্ড গ্রেনেড পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে সীমান্ত থেকে।

মে মাসে বিজিবির হাতে ধরা পড়া পণ্যের তালিকা বিশাল এবং বিস্ময়কর। এতে ছিল—১ কেজি ৫১২ গ্রাম স্বর্ণ, ২৪ লক্ষাধিক আতশবাজি, ১১৩১টি গরু-মহিষ, ৫৪ হাজার বোতল কাশির সিরাপ (ইস্কাফ), ১টি হ্যান্ড গ্রেনেড, ৫টি বিদেশি পিস্তল, ৬ লক্ষাধিক ইয়াবা, ১৩টি ট্রাক ও ৭২টি মোটরসাইকেল, এমনকি কষ্টি পাথরের মূর্তি।

চোরাচালানকারীরা শুধু সীমান্ত দিয়ে নয়, বরং সড়ক, নদীপথ ও ছোট যানবাহন ব্যবহার করেও এই পণ্য পাচারের চেষ্টায় লিপ্ত ছিল। জব্দ হওয়া ৯২টি নৌকা এবং ২৬টি সিএনজি/ইজিবাইক-এর উপস্থিতি এ কথারই প্রমাণ দেয়।

এই চোরাচালান তৎপরতার একটি বিপজ্জনক দিক হচ্ছে মাদকের বিস্তার। গত এক মাসে: ৬,২০,৯৬৬ পিস ইয়াবা, ১০ কেজির বেশি হেরোইন,

২৩ গ্রাম আইস (ক্রিস্টাল মেথ), ১ কেজি কোকেন, ১০ হাজার ফেনসিডিল, ৮ হাজারের বেশি বিদেশি মদ, ১,৯০০ কেজির বেশি গাঁজা, ৫ বোতল এলএসডি।

 

এসব মাদক শুধু সীমান্তে আটকে থাকেনি—তাদের গন্তব্য ছিল দেশের অভ্যন্তর, শহরের অলি-গলিতে। বিজিবির জব্দ করা এসব উপাদান দেশব্যাপী মাদক চোরাচালান নেটওয়ার্কের বিস্তারের ইঙ্গিত দেয়।

এ মাসেই বিজিবি ৭২৫ জন অবৈধ অনুপ্রবেশকারী—বাংলাদেশি ও ভারতীয় নাগরিককে আটক করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক, ৩৯০ জন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীকেও ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি সীমান্ত নিরাপত্তার পাশাপাশি আঞ্চলিক সংকটকেও নতুন করে সামনে নিয়ে আসে।

 

চোরাচালান রোধে রাষ্ট্রের চ্যালেঞ্জ

 

চোরাচালান বা সীমান্ত অপরাধ নতুন কিছু নয়, তবে এর প্রযুক্তিগত, আর্থিক এবং সংগঠিত পরিসর দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিজিবি’র প্রতিবেদন বলছে, মে মাসে ১৪৫ জন চোরাচালানকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়—তাদের পেছনে থাকা মূল পরিকল্পনাকারীরা কে? কাদের মদদে এই বহুমাত্রিক চোরাচালান নেটওয়ার্ক সক্রিয়?

 

বিজিবি’র ভূমিকা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। কিন্তু এই সাফল্যকে টেকসই করতে হলে প্রয়োজন শুল্ক গোয়েন্দা, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ, নৌপুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বিত তৎপরতা। একই সঙ্গে, সীমান্ত এলাকায় জনসচেতনতা, বিকল্প কর্মসংস্থান এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছাও অপরিহার্য।