রাজনীতির ময়দানে শান্ত অথচ দৃঢ়চেতা কণ্ঠস্বর ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী, গণফোরামের সভাপতি এবং জাতীয় রাজনীতির এক আপসহীন সৈনিক মোস্তফা মহসিন মন্টু আর নেই। রোববার (১৫ জুন) বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের উত্তাল সময়টিতে তরুণ মন্টু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেও তিনি রাজপথে সক্রিয় হয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য অস্ত্র হাতে তুলে নেন এই সাহসী সন্তান। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসেবেও তার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। একাত্তরের সেই রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে তার দৃপ্ত ভূমিকা আজও স্মরণীয় হয়ে আছে সহযোদ্ধা ও ইতিহাস সচেতন সমাজে।
রাজনৈতিক জীবনে মোস্তফা মহসিন মন্টু ছিলেন সততা, আদর্শ ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রতীক। আওয়ামী লীগের রাজনীতি দিয়ে যার পথচলা, পরবর্তীতে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে গিয়ে যোগ দেন ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামে। দলটির সভাপতি হিসেবে তিনি ছিলেন নিরলস কর্মী, সদা সক্রিয় সংগঠক। ক্ষমতার রাজনীতিতে না থেকেও তিনি ছিলেন নীতিনিষ্ঠ মতাদর্শের একজন প্রবক্তা।
মোস্তফা মহসিন মন্টুর মৃত্যুতে দেশের রাজনীতিতে এক নির্লোভ, নীতিবান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নেতার শূন্যতা তৈরি হলো, যা সহজে পূরণ হওয়ার নয়।
তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এক শোকবার্তায় তারা বলেন, “মোস্তফা মহসিন মন্টু ছিলেন একজন আদর্শবাদী ও রাষ্ট্রবাদী রাজনীতিক। গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকারের প্রশ্নে তিনি কখনো আপস করেননি।”
শোকবার্তায় তারা আরও বলেন, “দেশপ্রেমিক এই রাজনীতিকের মৃত্যুতে জাতি একজন মুক্তিযোদ্ধা, একজন প্রাজ্ঞ রাজনৈতিক চিন্তাবিদের অভাব অনুভব করবে।”
এদেশের রাজনীতি যখন ব্যক্তিকেন্দ্রিক ও ক্ষমতাকেন্দ্রিকতার চক্রে আবদ্ধ, তখন মোস্তফা মহসিন মন্টুর মতো আদর্শবান নেতার উপস্থিতি ছিল এক ধরনের নৈতিক শক্তি। তার মৃত্যুতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হলো, তা কেবল রাজনীতির পরিধিতেই সীমাবদ্ধ নয়—এটি দেশের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ এবং মূল্যবোধনির্ভর নেতৃত্বের ধারায়ও এক অপূরণীয় ক্ষতি।
বাংলাদেশের ইতিহাস তাকে মনে রাখবে একজন সংগ্রামী মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক সৎ সাহসের প্রতীক এবং আদর্শবাদী নেতৃত্বের উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে।