আমতলীর কুকুয়া ইউনিয়নের রায়বালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠের মাটি কেটে নির্মিতব্য ভবনের ভিটি ভরাট করায় পৌনে দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর জীবন ঝুঁকিতে পরেছে। বন্ধ রয়েছে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলাও। টাকার বিনিময়ে প্রধান শিক্ষক মাটি বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এঘটনায় প্রধান শিক্ষককে কারন দর্শানো হয়েছে।
জানা গেছে, আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের রায়বালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫ কক্ষের দ্বিতলা ভবন নির্মানের জন্য ২০২৩ সালের জুলাই মাসে দরপত্র আহবান করে আমতলী এলজিইডি। দরপত্রে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কাজটি পায় মেসার্স তানহা এন্টার প্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানিটির মালিক মো. আবুল কালাম মিলন। কাজটি তিনি বিক্রি করে দেন স্থানীয় ঠিকাদার এ্যাডভোকেট মো. নুরুল ইসলামের নিকট। ভবনটি বাস্তবায়নের জন্য ২০২৩ সালের ১ অক্টাবর কার্যদেশ প্রদান করে আমতলী উপজেলা এলজিইডি। ভবন নির্মানের ব্যয় ধরা হয় ৯৯ লক্ষ ৫১ হাজার ২শ’ ৫৩ টাকা। ২০২৪ সালের ১লা জুলাই কাজটি শেষ করার কথা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় ঠিকাদারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ান এলজিইডি। কিন্তু বাড়তি ওই সময়ের মধ্যে ভবনের কয়েকটি পিলার নির্মান ছাড়া আর কিছুই করেনি ঠিকাদার। তবে এর মধ্যে ঠিকাদার ৫০ লক্ষ ৬৪ হাজার ৭শ’ টাকা বিল তুলে নিয়েছেন। পিলার নির্মানের পর সাব ঠিকাদার মো. নুরুল ইসলাম প্রধান শিক্ষক শাহিনা বেগমকে ম্যানেজ করে ডিম্বেও মাসের মাঝামাঝি সময় ৫০ ফুট দেঘর্য ও ১৫ ফুট প্রস্তের ৮-১০ ফুট গভীর করে মাঠ থেকে মাটি কেটে নির্মিতব্য ভবনের ভিটি ভরাট করেন।
স্কুল মাঠের মাটি কেটে ভিটি ভরাট করায় বিদ্যালয়ের প্রায় পৌনে দুই শতাধিক শিক্ষাথর্ীর জীবন এখন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। বিশাল আকারে গর্ত করে মাটি কাটায় যে কোন সময় খেলা ধুলা কিংবা চলাচল করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা গর্তে পওে তাদের জীবন বিপন্ন হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অভিভাবকরা।
অভিভাবক মো. হাসান মৃধা অভিযোগ করে বলেন, এভাবে স্কুলের মাঠের মাটি কাটায় শিক্ষার্থীদের এখন খেলাধুলা বন্ধ রয়েছে। আমাদের ছেলে মেয়েদের স্কুলে পাঠাতেও ভয় লাগে কখন গর্তে পরে আহত কিংবা মারা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষাথর্ী বলেন, স্কুলের মাঠের মাটি কেটে ভিটি ভরাট করায় আমরা এখন মাঠে খেলাধুলা করতে পারি না। আবার ভয়ের মধ্যে থাকি কখন পা পিছলে গর্তে পওে ব্যাথা পাই।
বিদ্যালয়ের জমিদাতা মো. ফজলুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষক টাকার বিনিময়ে ঠিকাদারকে স্কুলের মাঠের মাটি কেটে ভবনের ভিটি ভরাটের অনুমতি দিয়েছেন। মাঠের মাটি কেটে ভিটি ভরাট করায় শত শত শিক্ষার্থীদের জীবন এখন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। কোন শিক্ষার্থী যদি এই গর্তে পড়ে মারা যায় কিংবা আহত হয় তাহলে এর জন্য প্রধান শিক্ষক দায়ী থাকবেন।
রায়বালা গ্রামের ইউপি সদস্য মো. জাকির হোসেন বলেন, এভাবে স্কুলের মাঠের মাটি কেটে ভিটি ভরাট করায় শিক্ষার্থীদের জীবন এখন ঝুঁকির মধ্যে পরেছে। প্রধান শিক্ষকের এটা করা ঠিক হয়নি। আমি এঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দাবী করছি।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক শাহিনা আক্তার টাকা নিয়ে স্কুলের মাঠের মাটি কাটতে দেওয়ার অনুমতির কথা অস্বীকার করে বলেন, ভবনের ভিটি ভরাটের জন্য কোথাও মাটি না পাওয়ায় অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
সাব ঠিকাদার এ্যাডভোকেট মো. নুরুল ইসলাম বলেন, স্কুল মাঠের মাটি কেটে ভবনের ভিটি করার কথা স্বীকার কওে বলেন, প্রধান শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে মাটি কাটা হয়েছে। তবে আমি স্কুল মাঠের গর্ত দ্রুত ভরাট কওে দেব। ভবন নির্মানে বিলম্বের বিষয়ে বলেন, সময় সীমা শেষ হলেও পুনরায় সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে।
আমতলী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফিউল আলম বলেন, স্কুল মাঠের মাটি কাটার অনুমতি দেওয়ায় বুধবার সকালে প্রধান শিক্ষকে কারন দর্শাও নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এলজিইডির আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইদ্রিস মিয়া বলেন, ৩১ ডিশেম্বরের মধ্যে ভবন নির্মানের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ঠিকাদারের গাফেলতির কারনে শেষ হয়নি। দ্রুত ভবন নির্মানের জন্য ঠিকাদারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, স্কুল মাঠের মাটি কেটে ভবনের ভিটি ভরাট করার খবর পেয়েছি। এ বিষয়ে শিক্ষা কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দিয়েছি।